২০২৫ সালে মুসলিম বিয়ের খরচের তালিকা

- আপডেট সময় : ০১:০৭:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৮ বার পড়া হয়েছে
মুসলিম বিয়ের খরচের তালিকা নিয়ে বিস্তারিত জানুন। কাবিন, দেনমোহর, গায়ে হলুদ, সংবর্ধনা থেকে শুরু করে বিয়ের বাজেট কমানোর টিপস, সবই থাকছে এই আর্টিকেলে। বিয়ে শুধু দুজন মানুষের মিলন নয়, এটি একটি পরিবার ও সমাজের বড় সামাজিক অনুষ্ঠান। আমি যখন আমার আত্মীয়স্বজনদের বিয়ের আয়োজনের সাথে যুক্ত হই, তখন দেখেছি, বিয়ের খরচ পরিকল্পনা ছাড়া করলে প্রায়ই অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বেড়ে যায়। ইসলামে বিয়ে অত্যন্ত সহজ ও বরকতময় করার নির্দেশনা রয়েছে, তবে বাস্তব জীবনে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কিছু খরচ যুক্ত হয়। তাই মুসলিম বিয়ের খরচের তালিকা জানা ও একটি বাজেট তৈরি করা জরুরি।
মুসলিম বিয়ের খরচ নির্ধারণের মূল দিক
আমি সবসময় বিশ্বাস করি বিয়ে মানে অপচয় নয়, বরং সঠিক পরিকল্পনা। আল-কুরআনে আল্লাহ বলেছেন:
“নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।” (সূরা ইসরা, ১৭:২৭)
এই আয়াত থেকেই স্পষ্ট, বিয়ের খরচ কখনো বিলাসিতা বা অহংকারের প্রদর্শন হওয়া উচিত নয়। তাই প্রথমেই পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী বাজেট করতে হবে।
মুসলিম বিয়ের খরচের তালিকা
এখন আমি ধাপে ধাপে একটি বাস্তবসম্মত মুসলিম বিয়ের খরচের তালিকা তুলে ধরছি, যা বাংলাদেশে সাধারণত প্রচলিত।
১. কাবিন ও দেনমোহর
কাবিন ইসলামি বিয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দেনমোহর বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে কাবিননামা রেজিস্ট্রেশনের খরচ সাধারণত ৮০০ টাকা থেকে ১,২০০ টাকা পর্যন্ত হয়। দেনমোহরের পরিমাণ পরিবার ও উভয় পক্ষের আলোচনার ভিত্তিতে নির্ধারণ হয়।
২. মেহেদি অনুষ্ঠান খরচ
বাংলাদেশি মুসলিম সংস্কৃতিতে মেহেদি রাত খুব জনপ্রিয়। এখানে খরচ নির্ভর করে অতিথির সংখ্যা ও আয়োজনের ধরণে।
- সাজসজ্জা ও মেহেদি: ৫,০০০–১৫,০০০ টাকা
- খাবার: অতিথি সংখ্যা অনুযায়ী ২০,০০০–৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
৩. গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান
গায়ে হলুদে সাধারণত গান, সাজসজ্জা ও খাবারের খরচ বেশি হয়। অনেক পরিবার বাড়িতেই করে খরচ কমিয়ে আনে। তবে ভেন্যু নিলে খরচ বেড়ে যায়।
- সাজসজ্জা: ১০,০০০–২৫,০০০ টাকা
- পোশাক: কনে ও বর উভয়ের জন্য গড়ে ১৫,০০০–৩০,০০০ টাকা
- খাবার: ৩০,০০০–৮০,০০০ টাকা
৪. বিয়ের দিন খরচ
এটি আসল দিনের খরচ এবং সবচেয়ে বেশি বাজেট এখানে লাগে।
- ভেন্যু ভাড়া: ৩০,০০০–১,০০,০০০ টাকা (ঢাকা শহরে আরও বেশি হতে পারে)
- খাবার/ক্যাটারিং: জনপ্রতি ৪০০–৭০০ টাকা ধরে ৫০০ অতিথির জন্য প্রায় ২–৩.৫ লাখ টাকা
- আলোকসজ্জা ও সাজসজ্জা: ৫০,০০০–১.৫ লাখ টাকা
- কনের গহনা ও পোশাক: ১–৩ লাখ টাকা
- বর এর পোশাক: ২০,০০০–৫০,০০০ টাকা
৫. বিবাহোত্তর সংবর্ধনা
অনেক পরিবার আলাদা সংবর্ধনার আয়োজন করে।
- কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া: ২৫,০০০–৭৫,০০০ টাকা
- খাবার: ১.৫–৩ লাখ টাকা
- ফটোগ্রাফি ও ভিডিওগ্রাফি: ৩০,০০০–৭০,০০০ টাকা
৬. অতিরিক্ত খরচ
ছোট ছোট খরচগুলো প্রায়ই অগোচরে বাজেট বাড়িয়ে দেয়।
- গাড়ি ভাড়া: ১০,০০০–৩০,০০০ টাকা
- আমন্ত্রণপত্র: ৫,০০০–১৫,০০০ টাকা
- উপহার: ২০,০০০–৫০,০০০ টাকা
ইসলামী দৃষ্টিতে বিয়ের খরচ
রাসূল ﷺ বলেছেন:
“সবচেয়ে বরকতময় বিয়ে হলো, যেখানে খরচ কম হয়।” (মুসনাদে আহমদ)
অতএব, ইসলামে সরলতা বজায় রাখা শ্রেয়। আমাদের সমাজে বিয়ে প্রায়শই প্রতিযোগিতা ও আড়ম্বরের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, যা ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
মুসলিম বিয়ের খরচ কমানোর টিপস
আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সামান্য কিছু পরিকল্পনা করলেই খরচ অনেকটা কমানো যায়।
- প্রথমেই বাজেট লিখে রাখা।
- বাড়িতে অনুষ্ঠান করলে ভেন্যুর খরচ বাঁচে।
- একই দিনে মেহেদি ও গায়ে হলুদ করলে খরচ অর্ধেক কমে যায়।
- আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সহায়তা নিলে আলাদা সাজসজ্জার প্রয়োজন কমে।
আমার শেষ কথা
আমি বিশ্বাস করি, সুন্দর বিয়ে মানেই বিশাল খরচ নয়। সঠিক পরিকল্পনা, ইসলামের নির্দেশনা মানা এবং পরিবারের সহায়তায় যে কেউ একটি বরকতময় ও আনন্দঘন বিয়ে সম্পন্ন করতে পারে। খরচের তালিকা আগে থেকে জানলে ভুল সিদ্ধান্ত এড়ানো যায় এবং বাজেট নিয়ন্ত্রণে থাকে।
প্রশ্ন ১: মুসলিম বিয়ের সবচেয়ে জরুরি খরচ কোনটি?
উত্তর: দেনমোহর এবং কাবিননামা রেজিস্ট্রেশন ইসলামে সবচেয়ে জরুরি খরচ।
প্রশ্ন ২: বাংলাদেশে বিয়ের গড় খরচ কত?
উত্তর: ঢাকায় একটি সাধারণ মুসলিম বিয়ের খরচ গড়ে ৩–৭ লাখ টাকার মধ্যে হয়, তবে বড় আয়োজন হলে ১৫ লাখেরও বেশি লাগতে পারে।
প্রশ্ন ৩: বিয়ের খরচ কমানোর সেরা উপায় কী?
উত্তর: অপ্রয়োজনীয় অনুষ্ঠান বাদ দেওয়া, বাড়িতে আয়োজন করা, এবং অতিথির সংখ্যা সীমিত রাখা।
এই আর্টিকেলটি তরুণ-তরুণীদের জন্য বিয়ের খরচ পরিকল্পনার একটি নির্ভরযোগ্য গাইড। আমি চাই আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আপনার বিয়েকে সুন্দর ও বরকতময় করতে সাহায্য করতে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এখানে প্রবেশ করুন।