বিএসসি মানে কি? পূর্ণরূপ, পড়ার বিষয়, কোর্স সময়কাল

- আপডেট সময় : ০২:৩০:০৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৫ ৪০ বার পড়া হয়েছে
বিএসসি মানে কি, কত বছরের কোর্স, কোন বিষয়ে পড়া যায়, চাকরির সুযোগ ও বাংলাদেশে সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তথ্য জানুন। তরুণদের জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইড। আমি যখন এইচএসসি শেষ করলাম, তখন আমার মাথায় প্রথম যে প্রশ্নটা আসে তা হলো, এখন কী পড়ব? বিশেষ করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যারা আসে, তাদের কাছে এই প্রশ্নটা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনেকেই তখন বলেন, “বিএসসি করবে?”। কিন্তু আমি তখনই ভেবেছিলাম, আসলে বিএসসি মানে কি? আর কেন সবাই এই ডিগ্রিকে এত গুরুত্ব দেয়। আজকের ব্লগে আমি আমার অভিজ্ঞতা, গবেষণা এবং বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বিস্তারিতভাবে বলবো, বিএসসি আসলে কী, কোন বিষয়ে পড়া যায়, কত বছরের কোর্স, চাকরির সুযোগ কেমন এবং কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া ভালো।
বিএসসি মানে কি
বিএসসি (B.Sc.) এর পূর্ণরূপ হলো Bachelor of Science, বাংলায় অর্থ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি। সাধারণত যারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, তারা বিএসসি বেছে নেয়। এই ডিগ্রি ছাত্রছাত্রীদের শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান দেয় না, বরং গবেষণা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা গড়ে তোলে।
উদাহরণস্বরূপ, আমি যখন কম্পিউটার সায়েন্স পড়ছিলাম, তখন শুধু প্রোগ্রামিং নয়, বরং বাস্তব জীবনের সমস্যার সমাধান কীভাবে করা যায় তা-ও শিখেছি। তাই বিএসসি শুধু একটা সার্টিফিকেট নয়, বরং একটা বাস্তব দক্ষতা অর্জনের মাধ্যম।
বিএসসি ডিগ্রির ধরন
বাংলাদেশে বা বিদেশে সাধারণত তিন ধরনের বিএসসি ডিগ্রি প্রচলিত। প্রথমটি হলো General B.Sc., যেখানে একাধিক বিষয়ে মৌলিক জ্ঞান দেওয়া হয়। দ্বিতীয়টি হলো B.Sc. Honors, যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা করা হয়। আর তৃতীয়টি হলো Professional B.Sc., যেমন নার্সিং বা এগ্রিকালচার, যা সরাসরি চাকরিমুখী। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যারা গবেষণা ও একাডেমিক ক্যারিয়ার চান, তারা সাধারণত অনার্স বেছে নেন। আর যারা দ্রুত চাকরিতে যেতে চান, তারা প্রফেশনাল বিএসসি বেছে নেন।
কোন কোন বিষয়ে বিএসসি করা যায়
বিএসসি পড়ার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে আছে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, প্রাণীবিদ্যা, উদ্ভিদবিদ্যা এবং কম্পিউটার সায়েন্স। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিএসসি নার্সিং, ফিজিওথেরাপি, মেডিকেল টেকনোলজি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। প্রযুক্তি খাতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বা সাইবার সিকিউরিটি এখন চাকরির বাজারে ব্যাপক চাহিদাসম্পন্ন।
বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১০ বছরে বাংলাদেশে আইটি সেক্টরে দক্ষ জনবল চাহিদা দ্বিগুণ হবে। তাই বিএসসি কম্পিউটার সায়েন্স এখন অনেক তরুণের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়।
বিএসসি পড়তে কত বছর লাগে
বাংলাদেশে সাধারণ বিএসসি ডিগ্রি সাধারণত ৩ বছরের। তবে অনার্স বা পেশাভিত্তিক কোর্সগুলো সাধারণত ৪ বছরের হয়ে থাকে। ভারত বা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশেও একই রকম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে সাধারণত ৪ বছরের বিএসসি প্রোগ্রাম অফার করা হয়। আমার এক বন্ধু জার্মানিতে পড়ছে, সে বলছিল, ওখানে বিএসসি শুধু পড়াশোনা নয়, বরং ইন্টার্নশিপ বা বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে যুক্ত থাকে।
বিএসসি করার যোগ্যতা
বিএসসি করতে হলে কিছু শর্ত মেনে চলতে হয়। প্রথমত, এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পাশ করতে হয়। গণিত এবং বিজ্ঞান বিষয়গুলোতে ভালো ফলাফল জরুরি। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হলে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করতে হয়। আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতেই ভর্তি হয়। আমি যখন ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম, তখন বুঝতে পারি, এখানে শুধু মুখস্থ পড়া নয়, বরং বাস্তব সমস্যা সমাধানের দক্ষতা যাচাই করা হয়।
বিএসসি করার সুবিধা
আমি মনে করি, বিএসসি করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি ছাত্রছাত্রীকে বহুমুখী সুযোগের দরজা খুলে দেয়। প্রথমত, বিএসসি শেষ করে আপনি উচ্চশিক্ষায় যেতে পারবেন—এমএসসি, এমফিল বা পিএইচডি। দ্বিতীয়ত, চাকরির বাজারে বিএসসি গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা ব্যাপক। তৃতীয়ত, বিদেশে পড়াশোনা বা গবেষণার ক্ষেত্রেও বিএসসি ডিগ্রি আপনাকে এগিয়ে রাখবে। ইউনেস্কোর একটি জরিপে বলা হয়েছে, বিশ্বের প্রায় ৪৫% বিজ্ঞানভিত্তিক চাকরি বিএসসি গ্র্যাজুয়েটদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
বিএসসি শেষে ক্যারিয়ার সুযোগ
আমি আমার কয়েকজন সিনিয়রকে দেখেছি, বিএসসি করার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলভাবে ক্যারিয়ার গড়তে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হয়েছেন, কেউ গবেষণায় যুক্ত হয়েছেন। কেউ কেউ আইটি সেক্টরে সফটওয়্যার ডেভেলপার বা ডেটা অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। আবার নার্সিং বা ফার্মেসি পড়া ছাত্রছাত্রীরা হাসপাতালে বা ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছেন। সবচেয়ে ভালো লাগে যখন দেখি, একটি ডিগ্রি কারও জীবন পুরোপুরি বদলে দিতে পারে।
বিএসসি বনাম বিএ পার্থক্য
অনেকে প্রশ্ন করেন, বিএসসি আর বিএ কি একই? না, একদম নয়। বিএসসি হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক পড়াশোনা, আর বিএ হলো মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের পড়াশোনা। যেমন, একজন বিএসসি পড়ুয়া হয়তো ল্যাবে গবেষণা করছে, আর একজন বিএ ছাত্র হয়তো ইতিহাসের নথি খুঁজছে। দুজনের ক্ষেত্র আলাদা হলেও উভয়েরই গুরুত্ব আছে।
বাংলাদেশে বিএসসি করার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশে বিএসসি করার জন্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি সবসময় সেরা মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এগুলো সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শীর্ষে। এছাড়া নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি বেসরকারি খাতে বেশ নামকরা।
আমার শেষ কথা
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলি, বিএসসি শুধুমাত্র একটি ডিগ্রি নয়, বরং একটি ভবিষ্যতের সেতু। তবে বিষয় বেছে নেয়ার আগে অবশ্যই নিজের আগ্রহ, দক্ষতা এবং ভবিষ্যতের চাকরির সুযোগ বিবেচনা করা উচিত। যদি আপনি এমন একটি পথ চান যেখানে জ্ঞান, গবেষণা আর ক্যারিয়ার একসাথে তৈরি হয়, তাহলে বিএসসি আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হতে পারে।
প্রশ্ন ১: বিএসসি মানে কি?
উত্তর: বিএসসি এর পূর্ণরূপ হলো Bachelor of Science, বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক।
প্রশ্ন ২: বিএসসি পড়তে কত বছর লাগে?
উত্তর: সাধারণত ৩ থেকে ৪ বছর।
প্রশ্ন ৩: কোন বিষয়ে বিএসসি করা যায়?
উত্তর: পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, কম্পিউটার সায়েন্স, নার্সিং, ফার্মেসি, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অনেক বিষয়ে।
প্রশ্ন ৪: বিএসসি শেষে চাকরির সুযোগ কেমন?
উত্তর: শিক্ষকতা, গবেষণা, আইটি, স্বাস্থ্য সেক্টর এবং কর্পোরেট জবে বিস্তৃত সুযোগ রয়েছে।
প্রশ্ন ৫: বাংলাদেশে কোথায় বিএসসি পড়া ভালো?
উত্তর: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এখানে প্রবেশ করুন।